আজ মঙ্গলবার ৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অপারেশন বান্দর—ভারতের ব্যর্থ এয়ারস্ট্রাইক ও পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া


Channel IR ডেস্ক রিপোর্ট | বরাতে: অনির্বাণ

অপারেশন বান্দর—ভারতের ব্যর্থ এয়ারস্ট্রাইক ও পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

২০১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি, জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আধাসামরিক বাহিনী CRPF-এর একটি কনভয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। এতে কমপক্ষে ৪৯ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হন। এই হামলার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং দেশজুড়ে পাকিস্তানবিরোধী উন্মাদনা তৈরি হয়। অনেকে এটিকে নির্বাচনী কৌশল হিসেবেও ব্যাখ্যা করেন, যেখানে একতরফা পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার চেষ্টা চলে।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ভারত শুরু করে “অপারেশন বান্দর”—পাকিস্তানের অভ্যন্তরে পরিচালিত একটি এয়ারস্ট্রাইক মিশন। লক্ষ্য ছিল খাইবার পাখতুনখোয়ার বালাকোট অঞ্চলে অবস্থিত একটি মাদ্রাসা, যেটিকে জ*ঙ্গিদের আস্তানা বলে দাবি করেছিল ভারত।

মিশনের পরিকল্পনা

ভারতীয় বিমানবাহিনী ইসরায়েলি সহায়তায় পরিকল্পনা করে একটি স্ট্র্যাটেজিক স্ট্রাইক, যেখানে মিরাজ-২০০০ বিমান থেকে ইসরায়েলি SPICE glide bomb ব্যবহার করা হয়। পুরো মিশনের নেতৃত্বে ছিল ভারতীয় Airborne Warning and Control System (AWACS), যা ৪-৫ শত কিলোমিটার রেঞ্জের রাডার দিয়ে পুরো মিশন পর্যবেক্ষণ করে।

মিশনের সময় একাধিক “ফলস ডাইভারশন” তৈরি করা হয় যাতে পাকিস্তানী ফাইটার জেটগুলো বিভ্রান্ত হয়। ভারতীয় বিমানবাহিনী আকাশে একাধিক দিক থেকে ছোট ছোট ফর্মেশন পাঠায়—যেমন ফজিলকা, ভাওয়ালপুর এবং করাচির দিকে—যাতে পাকিস্তান CAP (Combat Air Patrol) ইউনিটগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ে।

পাকিস্তানের প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান এই ধরনের হামলার সম্ভাবনা আগেই বুঝতে পেরে তার এয়ারস্পেস রক্ষায় চারটি CAP ইউনিট মোতায়েন করে, যার মধ্যে ছিল JF-17 এবং F-16 যুদ্ধবিমান। এছাড়াও ছিল ADF (Air Defence Fighter) ফোর্স, যারা অতি দ্রুত রেসপন্স করতে সক্ষম।

যখন ভারতীয় ফাইটারগুলো আসল হামলার উদ্দেশ্যে আজাদ কাশ্মীরের আকাশসীমা অতিক্রম করে, তখন পাকিস্তান F-16 বিমান স্ক্র্যাম্বল করে। ভারতীয় মিরাজ বিমানগুলো তখন বাধ্য হয়ে সীমান্তের ২-৩ কিলোমিটার ভেতরে থেকে বোমা ফেলে ইউটার্ন নেয়, কারণ তারা রাডারে F-16-এর উপস্থিতি টের পায়।

হামলার ফলাফল

ভারতীয় মিডিয়া দাবি করে ৩০০-৪০০ জন জ*ঙ্গি মারা গেছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বোমাগুলো বালাকোটের একটি নির্জন পাহাড়ে পড়ে। ক্ষয়ক্ষতি হিসেবে ধ্বংস হয় একটি কুঁড়েঘর, আহত হন একজন ব্যক্তি, এবং মারা যায় একটি কাক। এছাড়া কয়েকটি গাছও ধ্বংস হয়।

ভারতের মিশনে ব্যয় হয় প্রায় ৬৩০০ কোটি রুপি (৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), অথচ এর ফলাফল ছিল প্রায় শূন্য। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং স্যাটেলাইট চিত্রে কোনো জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও স্বীকার করেন, “এই অভিযানে কোনো জঙ্গি নিহত হয়নি।”

পাকিস্তানের জবাব: অপারেশন সুইফট রিটর্ট

২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পাকিস্তানের ISPR-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর এক টুইটে বলেন,
“Do you think you surprised us? You will never be able to surprise us. We will surprise you. Wait for the surprise.”

এর পরদিন, ২৭ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তান পরিচালনা করে পাল্টা অভিযান “অপারেশন সুইফট রিটর্ট”, যার অংশ হিসেবে একজন ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানের বিমান (MiG-21 Bison) গুলি করে ভূপাতিত করা হয় এবং তাঁকে বন্দি করা হয়।

উপসংহার

“অপারেশন বান্দর” ছিল মূলত একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সামরিক কৌশল, যেখানে প্রচার বেশি, বাস্তব কম। ভারতীয় মিডিয়া এবং রাজনীতি এটিকে এক বিশাল সাফল্য হিসেবে তুলে ধরলেও, বাস্তবে এটি ছিল একটি সামরিক ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা। বিপরীতে পাকিস্তান প্রমাণ করে দেয় যে তারা আকাশসীমা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত এবং সক্ষম।


Channel IR ডেস্ক | প্রতিবেদন: অনির্বাণ


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *