আজ শুক্রবার ১লা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফিলিস্তিনের পক্ষে সরব থাকায় তুর্কি নাগরিক রুমাইসা ওজতুর্ককে আটক করেছে মার্কিন প্রশাসন।

ফিলিস্তিনের পক্ষে সরব থাকায় তুর্কি নাগরিক রুমাইসা ওজতুর্ককে আটক করেছে মার্কিন প্রশাসন

Channel IR ডেস্ক রিপোর্ট

যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করতে থাকা তুর্কি নাগরিক রুমাইসা ওজতুর্ক-কে আটক করেছে মার্কিন প্রশাসন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি গাজার পক্ষে সরব ছিলেন এবং তার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে “ইজরায়েলি সমর্থিত সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার” আহ্বান জানিয়েছিলেন। মূলত এই রাজনৈতিক অবস্থান ও মতপ্রকাশের কারণে তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলা এবং এর পরিণতি

রুমাইসা ওজতুর্কের আটক হওয়ার ঘটনাটি মূলত তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি নিজে একজন শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন, তবে তার অবস্থান স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিল। তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে আহ্বান জানান, যাতে তারা ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সব ধরণের সহযোগিতা বন্ধ করে দেয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ইজরায়েলি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক না রাখে।

রুমাইসার এই কার্যক্রমের পর মার্কিন প্রশাসন তার ওপর নজর রাখে এবং তাকে আটক করা হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনা ঘটার পর মন্তব্য করেছে, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর একটি ভয়াবহ হস্তক্ষেপ।

স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল ও তুরস্কে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা

মার্কিন প্রশাসন এখন রুমাইসার স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছে। তার বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তার রাজনৈতিক মতামত এবং অবস্থানের জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে রুমাইসা তাকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হারাতে পারেন এবং তুরস্কে ফিরে যেতে বাধ্য হতে পারেন।

এটি বিশ্বব্যাপী শঙ্কা সৃষ্টি করেছে যে, মার্কিন প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক সমাজে এক বিপজ্জনক প্রবণতা।

মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং বিভিন্ন শিক্ষার্থী সংগঠন কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং একাডেমিক স্বাধীনতা দমন করা হয়েছে”। রুমাইসা ওজতুর্কের মতামত ছিল শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিকভাবে প্রকাশিত, তবে তাকে আটক এবং ভিসা বাতিলের পরিকল্পনা একটি ভয়াবহ নজির সৃষ্টি করছে।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ইজরায়েলের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের শক্তিশালী সমর্থন এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন প্রকাশের ফলস্বরূপই রুমাইসার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তারা বলেন, “ফিলিস্তিনপন্থী কণ্ঠসমূহকে দমন করার জন্য মার্কিন প্রশাসন একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চালাচ্ছে।”

সমাজের প্রতিক্রিয়া ও মুক্তির দাবি

এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী সংগঠনগুলো এবং মানবাধিকার কর্মীরা রুমাইসার মুক্তি দাবি করে সোচ্চার হয়েছে। তারা বলছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একটি মৌলিক অধিকার এবং কেউ যাতে তাদের মতামত প্রকাশের জন্য শাস্তি না পায়, তা নিশ্চিত করা উচিত।

তবে মার্কিন প্রশাসনের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতির প্রতি প্রশ্ন উঠিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি যদি প্রশমিত না হয়, তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মার্কিন প্রশাসনকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

পরবর্তী পদক্ষেপ

রুমাইসা ওজতুর্কের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে। যদি তার স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল হয় এবং তাকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়, তবে তার একাডেমিক ক্যারিয়ার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তুর্কি সরকারও এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাব্যবস্থা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, এই ঘটনার পর স্পষ্টভাবে বোঝাতে সক্ষম হবে যে তারা স্বাধীন মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক অভিব্যক্তির প্রতি কীভাবে মনোভাব পোষণ করে, বিশেষ করে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *