
সোমালিয়ায় পশ্চিমা সমর্থিত মোগাদিশু সরকার বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে, কারণ জনপ্রিয় সশস্ত্র ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন রাজধানী মোগাদিশু থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এবং অনেক শহর অবরোধ করে রেখেছে।

হিরান রাজ্যের পূর্বাঞ্চল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শাবাবের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মোগাদিশু সরকার এই অঞ্চল পুনর্দখলের জন্য সামরিক অভিযান শুরু করে, কিন্তু শাবাবের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ থেকে শাবাব মুজাহিদিনরা মধ্য শাবেলিতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে, প্রথম তিন দিনের অভিযানে ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা পুনর্দখল করে।

শাবাবের এই অগ্রগতি তাদেরকে রাজধানী মোগাদিশুর উপকণ্ঠে নিয়ে এসেছে। উত্তর দিক থেকে তারা মোগাদিশু বাহিনীর তিন বছরের অবরোধ ভেঙে জালাজদুদ রাজ্যকে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের সাথে একীভূত করেছে। দক্ষিণ দিক থেকে তারা তুর্কি সামরিক শিবিরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এবং বুরুন্ডিয়ান বাহিনীকে অবরুদ্ধ করে ২০১৯ সালের যুদ্ধে মোগাদিশু বাহিনীর দখল করা এলাকাগুলো মাত্র আট দিনের মধ্যে পুনর্দখল করেছে। এতে করে মোগাদিশুর সাথে সংযোগকারী চারটি সেতুর মধ্যে তিনটির নিয়ন্ত্রণ শাবাবের হাতে চলে গেছে।
শাবাব মুজাহিদিনরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বালদাউইন শহরকে তিন দিন ধরে ঘিরে রেখে ইথিওপিয়ান বাহিনীকে অবরুদ্ধ করেছে। কারিউলী জেলা ও বুলুমারি শহর অবরোধের মাধ্যমে মোগাদিশু বাহিনীর ১০,০০০ সৈন্য এবং উগান্ডার ১,০০০ সৈন্যকে আটকে রেখেছে। শাবাব মুজাহিদিনরা এই সৈন্যদের আত্মসমর্পণের শর্তে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছে, ফলে অনেক সৈন্য সামরিক বাহিনী ত্যাগ করছে। এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি হাসান শেখ মোহাম্মদ অপ্রশিক্ষিত পুলিশ, সামরিক বাহিনীর মহিলা সদস্য এবং কারাবন্দীদের ফ্রন্টলাইনে পাঠাচ্ছেন। তিনি নিজেও রাজধানী থেকে ২৩০ কিলোমিটার দূরের শহরে আশ্রয় নিয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন সোমালিয়ায় নিরাপত্তা সহায়তা স্থগিত করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় ব্যস্ত, এবং ইথিওপিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র বিমান সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তুরস্ক মোগাদিশু বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, বিমান সহায়তা, ড্রোন হামলা এবং অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে। জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন আফ্রিকান জোট বাহিনীর অধিকাংশ সামরিক ঘাঁটি শাবাবের অবরোধের মধ্যে রয়েছে, ফলে তারা স্থলপথে সহায়তা দিতে পারছে না।
শাবাব মুজাহিদিনদের একটি বড় দল মোগাদিশুর উপকণ্ঠে অগ্রসর হয়েছে, সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৭,০০০, যারা রাজধানীতে প্রবেশের জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তারা উত্তরের বালাদ, দক্ষিণের আদান-ইয়াবাল এবং উপকূলীয় আফগোয়ে ফ্রন্ট থেকে শহরের কেন্দ্রে অগ্রসর হচ্ছে। তাদের লক্ষ্য রাজধানীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মোগাদিশু বাহিনীর ৯০% সৈন্যকে শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করা। বারিরী শহরে শাবাবের অবরোধের মুখে মোগাদিশু বাহিনীর ১,৪০০ সৈন্য পিছু হটেছে। অনেক ফ্রন্টেই মোগাদিশু সৈন্যদের লড়াই করতে অস্বীকৃতি জানানোর ঘটনা ঘটছে।
এই পরিস্থিতিতে মোগাদিশু সরকারের কাছে শাবাবের অবরোধ ভাঙার খুব কম বিকল্প অবশিষ্ট রয়েছে। শাবাব মুজাহিদিনরা শহুরে এলাকায় বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে এবং বেসামরিক লোকদের রক্ষা করতে চায়। তাদের লক্ষ্য মোগাদিশুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইসলামী শরিয়া ভিত্তিক একটি ন্যায়সঙ্গত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।