
দিল্লিতে অবৈধ বাংলাদেশি গ্রেফতার ও বাংলাদেশে অবৈধ ভারতীয়দের সম্পর্কে প্রশাসন নীরব।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, Channel IR
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বেআইনিভাবে বসবাস এবং জাল নথি তৈরির অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক এবং ৮ জন দালাল রয়েছেন। দিল্লি পুলিশের ডিসিপি অঙ্কিত চৌহান জানিয়েছেন, এই চক্রটি অবৈধভাবে বাংলাদেশিদের ভারতে প্রবেশ করিয়ে তাদের বাসস্থান, চাকরি এবং নকল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিত।
এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মইনুদ্দিন, যিনি নিজামুদ্দিন এলাকায় বসবাস করেন এবং আমির খুসরো নগরে একটি সাইবার ক্যাফে পরিচালনা করেন, দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া আধার কার্ড, প্যান কার্ড ও ভোটার আইডি সরবরাহ করছিলেন। পুলিশ তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল নথি উদ্ধার করেছে।
এছাড়া ইউআইডিএআই নিবন্ধিত আধার এজেন্ট জুলফিকার আনসারি ও জাভেদ এই চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে কাজ করছিলেন। অন্যদিকে, নিজামুদ্দিন বস্তির বাসিন্দা মহম্মদ শাহিন বাংলাদেশি নাগরিকদের কাজের ব্যবস্থা করতেন। পশ্চিমবঙ্গের কিছু বাসিন্দা এই চক্রের মাধ্যমে হুন্ডি ও হাওয়ালার মাধ্যমে বাংলাদেশে অর্থ পাঠাতেন।
গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে আছেন মহম্মদ জুয়েল ইসলাম, তার ভাই মহম্মদ আলমগীর, লতিফ খান, মহম্মদ মিজানুর রহমান, রবিউল, এবং কামরুজ্জামান। তাদের মধ্যে অনেকে ভারতীয় নাগরিকত্বের নথি সংগ্রহ করেছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বসবাস করছিলেন। পুলিশের মতে, এই চক্র সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ অর্থ লেনদেনেও যুক্ত ছিল।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বেআইনি অনুপ্রবেশ, জালিয়াতি, অবৈধ বসবাস এবং ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহারের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশ আরও অনুসন্ধান চালাচ্ছে এবং চক্রটির অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশে অবৈধ ভারতীয়রা: প্রশাসনের নীরব ভূমিকা
ভারতে বাংলাদেশিদের গ্রেফতারের ঘটনা নতুন নয়, তবে উল্টোদিকে বাংলাদেশে অবৈধ ভারতীয়দের বসবাসের বিষয়টি প্রায়ই আলোচনার বাইরে থেকে যায়। ভারতের বিভিন্ন শহরে অবৈধ বাংলাদেশি থাকার অভিযোগে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, বাংলাদেশে হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চাকরির মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে, যা প্রশাসন প্রায়ই উপেক্ষা করে।
বাংলাদেশের ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে ভারতীয় নাগরিকরা রেস্তোরাঁ ব্যবসা, পোশাক খাত, তথ্যপ্রযুক্তি ও নির্মাণ খাতে কাজ করছে। অনেক ভারতীয় আবার স্থানীয়দের সাথে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নিচ্ছে। তবে বাংলাদেশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ভারতে অবৈধ বাংলাদেশিদের গ্রেফতারের ঘটনায় কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, বাংলাদেশে থাকা ভারতীয়দের অনিয়ন্ত্রিত বসবাস ও কাজের বিষয়ে প্রশাসনের নীরবতা এক ধরনের বৈষম্যের ইঙ্গিত দেয়। এই পরিস্থিতি দুই দেশের অভিবাসন নীতির মধ্যে বড় পার্থক্য তৈরি করছে।