আজ শনিবার ২১শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তাবলীগ মাদ্রাসা ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিরোধিতা করাই ছিল অপরাধ

Channel IR। ডেক্স রিপোর্টার

মুহাম্মাদ এমাদুল ইসলাম

📰 তাবলিগ, মাদ্রাসা ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিরোধিতা করাই ছিল ‘অপরাধ’

— মাওলানা শরীফের ওপর হামলার অভিযোগ |

জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ | ২০ জুন ২০২৫ তাবলিগ, মাদ্রাসা ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিরোধিতা করাই যেন হয়ে উঠেছিল অপরাধ। এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় আলেম মাওলানা শরীফ আহমদ, যিনি সম্প্রতি এক ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছেন।

মাওলানা শরীফ আহমদ (৪৫) কাতিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করে জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের খাগাউড়া গ্রামে একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে তাবলিগ জামাআতের দাওয়াতি কাজের সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি তিনি সামাজিকভাবে সুদ, গান-বাজনা ও অন্যান্য অসামাজিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তিনি ইসলামী রাজনৈতিক দলের পক্ষেও সক্রিয় ছিলেন।তবে এসব কর্মকাণ্ড পছন্দ ছিল না স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহলের, বিশেষ করে আওয়ামী লীগপন্থী কিছু মোড়লের। শুরু থেকেই তারা মাওলানা শরীফের বিরোধিতা করে আসছিলেন এবং অভিযোগ অনুযায়ী তাকে থামাতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।

হামলার বিবরণগত ১৭ জুন বুধবার সন্ধ্যায় পাশ্ববর্তী শুইরারপার এলাকা থেকে একটি গরু নিয়ে ফিরছিলেন মাওলানা শরীফ। নিজের গ্রামের ফারুক মিয়ার খামারের দক্ষিণ পাশে বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছে মাগরিবের আজান হলে তিনি নামাজে দাঁড়ান। নামাজ শেষ করার পর অতর্কিতে একদল সন্ত্রাসী তাকে ঘিরে ফেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ত্রাসীরা প্রথমে নামাজ তাড়াতাড়ি শেষ করতে চাপ দেয়। এরপর তিনি দুই রাকাআত সুন্নাত পড়তে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। নামাজ শেষ হতেই তার হাত পেছনে বেঁধে বর্বরভাবে মারধর শুরু করা হয়।

হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী ও ওয়ার্ড সদস্য মামুন সিদ্দিক, মহিম উদ্দিন, আল-আমিন, কামরুল ইসলাম, জুনায়েদ ও রুবেল। হামলার সময় তারা মাওলানা শরীফকে বলেন:> “তুই তাবলিগ করিস! মাইকে ডাক দিস দাওয়াত দেওয়ার জন্য। এখন তোর বাপদের নিয়ে আয়!”পরবর্তীতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে নেওয়া হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল আহাদের বাড়িতে, পরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দেক আলীর বাড়িতে। সেখানে তাকে দেশীয় অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়।মাওলানা শরীফ সোজা জানিয়ে দেন—> “আমি মিথ্যা বলতে পারব না।”তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা ভিডিও ধারণ করে মিথ্যা স্বীকারোক্তির চেষ্টা করে এবং আরও নির্যাতন চালায়।উদ্ধার ও চিকিৎসাপরিবারের মাধ্যমে খবর পেয়ে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে। পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর সিলেট ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।স্থানীয় প্রতিক্রিয়াঘটনার পর এলাকাজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেকেই এই বর্বরতার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেন, “ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার চর্চা যদি হামলার কারণ হয়, তাহলে সমাজ ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে।”পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মামলা দায়ের হয়নি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *