আজ মঙ্গলবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মিথ্যা চুরির অভিযোগে ৩ নারীর চুল কেটে দিল কট্টরপন্থী হিন্দু সুমন শীল


আখাউড়ায় চুরির অভিযোগে নারীদের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ, কট্টরপন্থী ব্যবসায়ী সুমন শীলের বিরুদ্ধে আইন হাতে তুলে নেওয়ার অভিযোগ
Channel IR প্রতিবেদক | ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মিথ্যা চুরির অভিযোগে তিনজন মুসলিম নারীর মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় কট্টরপন্থী হিন্দু ব্যবসায়ী সুমন শীলের নেতৃত্বে একটি মব গঠন করে প্রকাশ্যে এ শাস্তি কার্যকর করা হয়। এই ঘটনায় আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, নারী নির্যাতন এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ—তিনটিই একসাথে উঠে এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, জনতার সামনে জড়ো হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচির মধ্যে তিন নারীর মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, সুমন শীল দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে আসছেন এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিচয়ের আড়ালে বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

আইন বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, চুরির অভিযোগ থাকলেও সেটির তদন্ত ও বিচার করার জন্য দেশের প্রচলিত আইন রয়েছে। কোনো ব্যক্তির হাতে এমন প্রকাশ্য ‘শাস্তি’ দেওয়া সরাসরি সংবিধান ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এই ধরনের কাণ্ড একটি গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ভয়ংকর প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।

সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি ইসলামপন্থী পরিচয়ের হতেন, কিংবা ভুক্তভোগীরা অন্য ধর্মাবলম্বী—তবে কি প্রশাসন, মিডিয়া ও সুশীল সমাজ এতটাই চুপ থাকত? অনেকে এটিকে রাষ্ট্রীয় ও মিডিয়া-চালিত ‘ধর্মভিত্তিক দ্বিচারিতা’ হিসেবে দেখছেন।

মানবাধিকারকর্মী ও বিশ্লেষকরা অভিযোগ করেছেন, কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী এদেশে প্রকাশ্যে তলোয়ার হাতে মিছিল করে, মুসলিম নারীদের হিজাব ধরে টানে, হোলির রঙ জোর করে মাখায়—তবুও সুশীল সমাজ নিশ্চুপ থাকে। অথচ মুসলিম কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্ষুদ্রতম অভিযোগ এলেই ব্যাপক হৈচৈ ওঠে।

স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, “ঘটনার ভিডিও আমরা দেখেছি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে এলাকাবাসীর একটি অংশের অভিযোগ, সুমন শীলের প্রভাবের কারণে অনেক সময় প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করে।

এই ঘটনার মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে—একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মুসলিম নারীদের নিরাপত্তা কোথায়? যদি কোনো ধর্মীয় পরিচয় থাকাই হয় নির্যাতনের বৈধতা, তবে রাষ্ট্র তার সাংবিধানিক দায় পালনে কোথায় দাঁড়িয়ে?


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *