
Channel IR। ডেক্স রিপোর্ট
মুহাম্মাদ এমাদুল ইসলাম। পটুয়াখালী প্রতিনিধি
১২/০৬/২০২৫
—🕌 ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জীবনসংগ্রাম: স্মার্ট বাংলাদেশে সম্মানজনক বেতন নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি
কলামে: মু. মঈন উদ্দিন শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক, প্রাথমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী জেলা।
তিনি বলেন বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম, মহল্লা ও শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত একটি পবিত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান—মসজিদ।
আর এই মসজিদে যাঁরা নিয়োজিত থাকেন, তাঁরা হলেন ইমাম ও মুয়াজ্জিনগণ।
তারা শুধু নামাজ পরিচালনা করেন না; বরং সমাজের নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান, সামাজিক দিকনির্দেশনা, এমনকি পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তিতেও তারা গুরুত্বপূর্ণ পরোক্ষ ভূমিকা রাখেন। অথচ আজ এই মহৎ পেশায় নিয়োজিত মানুষগুলো অবহেলা ও বঞ্চনার চরম বাস্তবতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
প্রায় সব মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন স্থানীয় কমিউনিটির অনুদানের ওপর নির্ভরশীল।
অনেক সময় এই অনুদান ন্যূনতম জীবিকা নির্বাহের জন্যও যথেষ্ট হয় না। একটি পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য যেখানে ন্যূনতম আয়ের প্রয়োজন, সেখানে ইমাম-মুয়াজ্জিনগণ মাসে মাত্র ৫,০০০ বা ৬,000 টাকার অনুদানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এমনকি ক্ষুধা নিবারণে নুন-মরিচ ও দু’মুঠো ভাত জোটানোও কঠিন হয়ে পড়ে। এভাবেই অনেকেই অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের কষ্টের কথা শোনার যেন কেউ নেই।এর চেয়েও দুর্ভাগ্যজনক হলো—অনেক সমাজপতি মসজিদের সভাপতি/সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সম্মানজনক ও নিয়মিত বেতন প্রদানে অনীহা দেখান। অনেক সময় দুই, তিন কিংবা ছয় মাস বেতন বকেয়া পড়ে থাকে।
আর যদি কেউ বেতন চেয়ে তাগাদা দেন, তাহলে চাকরি হারানোর হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। এটা শুধু অমানবিকই নয়, বরং ধর্মীয় মূল্যবোধেরও পরিপন্থী।এই প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে আসে—আমরা যখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি, ডিজিটাল অবকাঠামো ও উন্নত জীবনের কথা বলি, তখন এই শ্রেণির মানুষদের জীবনমান এখনো এত করুণ কেন?সরকার ইতোমধ্যে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও সীমিত ভাতার ব্যবস্থা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লক্ষাধিক ইমাম-মুয়াজ্জিন রয়েছেন, যাঁদের জন্য একটি সম্মানজনক, স্থিতিশীল ও নির্ধারিত বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি।এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান, প্রবাসী বাংলাদেশি, কর্পোরেট সেক্টর এবং স্থানীয় প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক তহবিল গঠন, বেতনের ন্যূনতম হার নির্ধারণ এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে তদারকি ব্যবস্থা চালু করে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের পেশাগত মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।ইসলামের মূল মর্মবাণীই হলো—ন্যায়, সম্মান ও মানবিকতা। যারা ধর্মের এই মহান সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন, তাঁদের জীবনকেও সেই আদর্শে রক্ষা করাই আমাদের সকলের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব।