আজ শনিবার ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আফগানিস্তানে পরিত্যক্ত মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম পুনরুদ্ধার: কতটা বাস্তবসম্মত?

লেখক: মীর হামিদুল্লাহ মীর

২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর, বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম রেখে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে অস্ত্র, মেশিনগান, গোলাবারুদ, ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য সামরিক ও অসামরিক সম্পদ অন্তর্ভুক্ত ছিল। অনুমান করা হয়, প্রায় ৭.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সরঞ্জাম ফেলে রাখা হয় যা তালেবান ও অন্যান্য যোদ্ধাদের হাতে চলে যায়।

এই প্রবন্ধে বর্তমান পরিস্থিতির জটিলতা, প্রবেশযোগ্যতা, আর্থিক ও লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ বিবেচনা করে এই সরঞ্জাম পুনরুদ্ধারের সম্ভাব্যতা ও কৌশলগত মূল্যায়ন করা হয়েছে। লেখকের মতে, পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা কর্মীদের জন্য উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকটি সংঘাতে জড়িয়ে ফেলতে পারে।

ভূমিকা

দীর্ঘ ২০ বছরের মার্কিন সামরিক উপস্থিতির সময়ে, আফগান ন্যাশনাল আর্মি (এএনএ) এবং আফগান ন্যাশনাল পুলিশ (এএনপি) আফগান জনগ্ণের উপর জুলুম ও দখলদারিত্বের জন্য উল্লেখযোগ্য সামরিক সহায়তা পেয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানকে প্রায় ৭.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছিল । তবে, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থান শত শত সামরিক ও অসামরিক সরঞ্জাম পরিত্যক্ত করে, যা তালেবানদের হাতে চলে যায়।

২০২২ সালের প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পরিত্যক্ত সরঞ্জামের মধ্যে ৭৮টি বিমান, ৪০,০০০ সামরিক যান এবং ৩০০,০০০ অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল । এই বিমান ও সামরিক যানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ৩৩টি UH-60 ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার, ২৩টি A-29 লাইট অ্যাটাক এয়ারক্রাফট এবং ৩২টি Mi-17 হেলিকপ্টার। এছাড়াও, অনুমান করা হয় যে ২,৫০০ থেকে ২২,০০০ হামভি এবং ৩,৫৯৮টি M4 কারবাইন পরিত্যক্ত হয়।

প্রতিবেদন অনুসারে, এই অস্ত্রগুলো পার্শ্ববর্তী দেশ, বিশেষ করে পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হয়েছে । এই অস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা এবং তাদের দ্বারা ব্যবহারের আশঙ্কা গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

আফগানিস্তানের ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা, আর্থিক সংকট, লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায়, এই অস্ত্র ও সরঞ্জাম যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত কঠিন। আফগানিস্তানের ভূমিবেষ্টিত অবস্থা, রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে মিলে নিরাপদ পরিবহন প্রায় অসম্ভব করে তোলে। পুনরুদ্ধার, বিচ্ছিন্নকরণ এবং শিপমেন্টের খরচ ও জটিলতা লজিস্টিক চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে, যেকোনো বৃহৎ পরিবহন অপারেশন ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন করবে, যা খরচ ও অপারেশনাল ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি করবে। এই সব বিষয় একত্রে বিবেচনা করলে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম পুনরুদ্ধার অত্যন্ত অবাস্তব বলে মনে হয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *