
সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ইস্যুতে জনপ্রিয় লেখক ও এক্টিভিস্ট আসিফ আদনান তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে লিখেন,
রাখাইন করিডোর ইস্যু মূলত আরাকান আর্মির মতো একটি নন-স্টেট সশস্ত্র গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে মানবিক করিডোর সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা। এই উদ্যোগ ইউনুস সরকার একতরফাভাবে এগিয়ে নিচ্ছে, কোনো জাতীয় পরামর্শ বা ম্যান্ডেট ছাড়াই।
.
এটা খুব সেনসেটিভ পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বলে যেখানেই এধরণের ‘মানবিক করিডোর’ তৈরি হয়েছে নিরাপত্তাজনিত সংকট ও নতুন অস্থিতিশীলতার জন্ম হয়েছে—সেটা কুর্দিস্তান হোক, বসনিয়া কিংবা ইউক্রেন।
.
ইউনুস সরকার কিংবা ছাত্র উপদেষ্টাদের এধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার ম্যান্ডেট কে দিয়েছে? কোন জাতীয় সংলাপ বা পরামর্শ ছাড়াই কেন একতরফা সিদ্ধান্তে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?
.
আরাকান ইস্যুতে সরকারের অবস্থান শুরু থেকেই ধোঁয়াশাপূর্ণ। ইউনুস সাহেব কক্সবাজার গিয়ে চাটগাঁইয়া ভাষায় বক্তব্য দিলেন। তার বিশেষ সহকারী ও পরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে বসা খলিলুর রহমান এমন একটি হাইপ সৃষ্টি করলেন যেন মিয়ানমার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে।
.তিনি আরও বলেন
সরকারের চিয়ারলিডাররা—সো-কোল্ড ‘ইউনুসেক্সুয়ালরা’— কয়েকদিন ব্যাপক প্রপাগান্ডা চালালো। আদিখ্যেতা করলো। অথচ বাস্তবে, তখনও নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এবং যারা আসছেন, তারা আসছেন আরাকান আর্মির নির্যাতন থেকে পালিয়ে। আজ সেই আরাকান আর্মিকেই করিডোর দেয়ার জন্য সরকার উন্মুখ হয়ে উঠেছে।
.
এসব সিদ্ধান্ত কীভাবে হচ্ছে? কোন শর্তে হচ্ছে? আমাদের স্বার্থ এতে কীভাবে সুরক্ষিত হচ্ছে—এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই।
.
আরাকান আর্মি ও আরসা—দুটোই নন-স্টেট অ্যাক্টর। আরাকান আর্মি অতীতে আমাদের ভূখণ্ডের ভেতর ফায়ার করেছে। আরসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দল, তাদের স্বার্থে লড়াই করেছে। ডীপ স্টেটের সাথে আরসা-র এক ধরণের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল বলেও অনেকে ধারণা করেন।
.
তাহলে কেন একদিকে আরাকান আর্মির সাথে করিডোর নিয়ে এত আগ্রহ, আর অন্যদিকে আরসার নেতাকে বন্দি করে রাখা? সরকারের নীতির অসামঞ্জস্য স্পষ্ট।
.
পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্র বহুদিনের; উলামায়ে কেরাম বারবার এ নিয়ে সতর্ক করেছেন। পূর্ব তিমুরের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর আশঙ্কা আজ বাস্তব আশঙ্কায় পরিণত হচ্ছে।
..তিনি আরও বলেন
আমাদের দেশ ছোট, জাতি বড়। জনগণের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের ভূখণ্ড যথেষ্ট নয়। ভূখণ্ড সম্প্রসারণের চিন্তা দূরে থাক, আজ এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে যা আমাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতার জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
.
প্রতিটি ইঞ্চি ভূমি আমাদের আমানত; সেটাকে বাহিক্য কোন শক্তির স্বার্থে এবং প্রেসক্রিপশানে নেয়া সিদ্ধান্তের কারণে বিপন্ন করা চরম গাদ্দারী।
.
কিন্তু সরকার ও মিডিয়া এগুলো নিয়ে নীরব, তারা ব্যস্ত “জঙ্গিবাদ”-এর তামাদি হয়ে যাওয়া বয়ানকে পুনর্জীবিত করতে। তারা ব্যস্ত কালেমার পতাকা নিয়ে ধরপাকড় করতে।
.
এই করিডোর দেয়ার ম্যান্ডেট ইউনুস সরকার কিংবা ছাত্র উপদেষ্টাদের কেউ দেয়নি। এই যমীন ও কওমের নিরাপত্তা রক্ষায় আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের অবশ্যই নিজ কওমের অস্তিত্ব, নিরাপত্তা ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।
.
ইউনুস সরকার, আর এর চিয়ারলিডারদের মনে রাখা দরকার,
আমরা দিল্লির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি
ওয়াশিংটনের গোলামি করার জন্য নয়।